মৌলভীবাজার, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট বিভাগের একটি জেলা। বিশেষ বিবেচনায় মৌলভীবাজার বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা। মৌলভীবাজার পৌরসভাকে বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর পৌরসভা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এ জেলার ব্র্যান্ডিং স্লোগান হলো: চায়ের দেশ মৌলভীবাজার বা Moulvibazar: The Land of Tea.
এ জেলার নামকরন সম্পর্কে যতদূর জানা যায় তা হলো:
শাহ মোস্তফা-এর বংশধর মৌলভী সৈয়দ কুদরতউল্লাহ অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি মনু নদীর উত্তর তীরে কয়েকটি দোকানঘর স্থাপন করে ভোজ্যসামগ্রী ক্রয় বিক্রয়ের সুযোগ সৃষ্টি করেন। মৌলভী সৈয়দ কুদরতউল্লাহ প্রতিষ্ঠিত এ বাজারে নৌ ও স্থলপথে প্রতিদিন লোকসমাগম বৃদ্ধি পেতে থাকে। তার ফলে ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমের মাধ্যমে মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে মৌলভীবাজারের খ্যাতি। আর সেখান থেকেই এ জেলার নামকরন করা হয় মৌলভীবাজার।
মৌলভীবাজারের উত্তরে সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলা, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা, গোলাপগঞ্জ উপজেলা ও বিয়ানীবাজার উপজেলা; দক্ষিণে ত্রিপুরা রাজ্য (ভারত); পূর্বে কাছাড় (ভারত)এবং পশ্চিমে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলা ও বাহুবল উপজেলা অবস্থিত।
মৌলভীবাজার মহকুমা গঠিত হয় ১৯৬০ সালে এবং মহকুমাকে জেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে। পৌরসভা গঠিত হয় ১৯৩০ সালে। এ জেলার আয়তন ২৭৯৯ বর্গ কিলোমিটার এবং ঢাকা থেকে এ জেলার দূরত্ব প্রায় ১৯৭ কিলোমিটার।
এ জেলার প্রধান নদ-নদী ও হাওরের মধ্যে রয়েছে- মনু, বরাক, ধলাই, সোনাই, জুড়ী, কুশিয়ারা নদী, হাকালুকি, হাইল ও কাউয়াদিঘি হাওর ইত্যাদি।
মৌলভীবাজার জেলা ৭টি উপজেলা, ৭টি থানা, ৫টি পৌরসভা ও ২৩৫-২৩৮ পর্যন্ত মোট ৪টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত।
এ জেলার উপজেলাগুলো হলো:
কমলগঞ্জ, কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা, মৌলভীবাজার সদর, রাজনগর এবং শ্রীমঙ্গল উপজেলা।
মৌলভীবাজার এর অর্থনীতির প্রধান ভীত হলো চা শিল্প ও রাবার শিল্প । এ জেলায় প্রচুর পরিমানে চা ও রাবার উৎপাদিত হয় । এ ছাড়াও এ জেলার অর্থনীতিতে পর্যটন উল্ল্যেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছে।
রমেশ রামগৌড়-এর এক গ্লাসে তৈরি সাত রঙের চা পাওয়া যায় শ্রীমঙ্গলের রামনগরের মনিপুরীপাড়ায় এবং কালিঘাট সড়কের নীলকন্ঠ চা কেবিনে যেটি পর্যটকের কাছে অনেক বেশি পরিচিত। এ জেলায় বিভিন্ন উপজাতী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে যারমধ্যে মণিপুরী, খাসিয়া, ত্রিপুরা, হালাম উল্লেখযোগ্য।
মুক্তিযুদ্ধে মৌলভীবাজার ছিল ৪ নং সেক্টরের অধীন। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন সি.আর.দত্ত। ৮ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার শত্রুমুক্ত হয়। ২০২২ সালের জনশুমারী ও গৃহগণনা প্রতিবেদন অনুযায়ী এ জেলার জনসংখ্যা প্রায় ২১,২৩,৪৪৫ জন এবং শিক্ষার হার ৭৫.৭৪%। এ জেলার কিছু উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে:
বিএএফ শাহীন কলেজ, শমশেরনগর;
মৌলভীবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট;
মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়;
মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ;
শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ;
দি বাডস্ রেসিডেনসিয়্যাল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ;
আলী আমজাদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়;
রাজনগর পোর্টিয়াস মডেল উচ্চ বিদ্যালয়;
সাগরনাল সিনিয়র আলিম মাদ্রাসা;
সুজাউল সিনিয়র ফাযিল মাদ্রাসা;
আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম মৌলভীবাজার;
জামিয়া লুৎফিয়া আনওয়ারুল উলুম হামিদনগর বরুণা ইত্যাদি।
এ জেলার কিছু গুরুত্বপূর্ন, উল্লেখযোগ্য ও দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে:
মাধবকুন্ড জলপ্রপাত;
মাধবপুর লেক;
পরীকুন্ড;
মনু ব্যারেজ;
কুলাউরা ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাবার বাগান;
বড়লেখা উপজেলার আগর বাগান;
হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা (র.) এর মাজার;
পৃথিমপাশা নবাববাড়ি ও ইমামবাড়া, কুলাউড়া;
ঢাকা-মৌলভীবাজার সড়কে অবস্থিত চা কন্যা ভাস্কর্য;
হাকালুকি হাওর;
কাওয়াদীঘি হাওর;
মুরাইছড়া ইকোপার্ক;
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট;
রাবার বাগান ও টিলা;
বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক;
চা বাগান ও মনু ব্যারেজ;
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান;
ভাড়াউড়া লেক;
মাগুরছড়া খাসিয়াপুঞ্জি ও গ্যাসকূপ;
ডেনস্টন সিমেট্রি (শ্রীমঙ্গল) ইত্যাদি।
মৌলোভীবাজারের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বের মধ্যে আছেন:
হয়রত শাহ মোস্তফা (র:) - ইসলামি ব্যক্তিত্ব;
মৌলভী সৈয়দ কুদরতউল্লাহ - ইসলামি ব্যক্তিত্ব;
মুজাফফর খান - লেখক;
সৈয়দ মুজতবা আলী - প্রাক্তন প্রাদেশিক ও জাতীয় পরিষদ সদস্য;
মো. কেরামত আলী - খ্যাতিমান রাজনীতিবিদ ও দানশীল ব্যক্তিত্ব;
মোহাম্মদ মুহিবুর রহমান - পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য;
বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী - জাতীয় পরিষদ সিলেটের প্রথম মহিলা সদস্য;
হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী - সাবেক স্পীকার;
বিপ্লবী লীলা দত্ত নাগ - ঢাবির প্রথম ছাত্রী;
এম. সাইফুর রহমান - বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সর্বোচ্চ ১২ বার বার্ষিক অর্থ বাজেট পেশকারী অর্থমন্ত্রী;
ডক্টর রঙ্গলাল সেন- জাতীয় অধ্যাপক ও সমাজবিজ্ঞানী;
নাজমুন আরা সুলতানা- বাংলাদেশের প্রথম নারী বিচারপতি;
সৈয়দ মোহাম্মদ আলী - বাংলাদেশের ইংরেজি সংবাদিকতার পথিকৃৎ ও ইংরেজি দৈনিক দি ডেইলি স্টারের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক;
সুরেন্দ্র কুমার সিনহা - সাবেক প্রধান বিচারপতি;
শাহাব উদ্দিন - পরিবেশ,বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী;
এবাদত হোসেন - বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার ইত্যাদি।
এ জেলা থেকে বিভিন্ন ধরনের দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হয় যার মধ্যে আছে: বার্তা, বাংলার দিন, খোলা চিঠি ইত্যাদি।