বরগুনা জেলা | Barguna District | iEducation
বরগুনা জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর-এর আঘাতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলা। এ জেলার ব্র্যান্ডিং স্লোগান হলো:
“Barguna, The Land of Coastal Beauty”
এ জেলার নামকরণ সম্পর্কে যতদূর জানা যায় তা হলো: উত্তরাঞ্চলের কাঠ ব্যবসায়ীরা এতদ্ঞ্চলে কাঠ নিতে এসে খরস্রোতা খাকদোন নদী অতিক্রম করতে গিয়ে অনুকূল প্রবাহ বা বড় গোনের জন্য এখানে অপেক্ষা করত বলে এ স্থানের নাম বড় গোনা। কারো মতে আবার স্রোতের বিপরীতে গুন(দড়ি) টেনে নৌকা অতিক্রম করতে হতো বলে এ স্থানের নাম বরগুনা । কেউ কেউ বলেন , বরগুনা নামক কোন প্রতাপশালী রাখাইন অধিবাসীর নামানুসারে বরগুনা । আবার কারো মতে বরগুনা নামক কোন এক বাওয়ালীর নামানুসারে এ স্থানের নামকরণ করা হয় বরগুনা।
বরগুনা জেলার মোট আয়তন ১,৮৩১ বর্গ কিলোমিটার এবং সড়কপথে ঢাকা থেকে এ জেলার দূরত্ব প্রায় ২৭০ কিলোমিটার। এ জেলার দক্ষিণে পটুয়াখালী ও বঙ্গোপসাগর, উত্তরে ঝালকাঠি, বরিশাল, পিরোজপুর ও পটুয়াখালী; পূর্বে পটুয়াখালী এবং পশ্চিমে পিরোজপুর ও বাগেরহাট জেলা অবস্থিত।
বরগুনা থানা গঠিত হয় অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষদিকে এবং মহকুমায় উন্নীত হয় ১৯৬৯ সালে। আবার এ মহকুমাকে জেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় বরগুনা জেলা ৯নং সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত ছিলো এবং ৩রা ডিসেম্বর এ জেলা হানাদারমুক্ত হয়। বরগুনা জেলা ৬টি উপজেলা, ৬টি থানা, ৪টি পৌরসভা ও ১০৯ ও ১১০ নাম্বার সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত। এ জেলার উপজেলাগুলো হলো:
আমতলী, তালতলী, পাথরঘাটা, বরগুনা সদর, বামনা ও বেতাগী উপজেলা।
বরগুনা জেলা নারিকেল ও সুপারির জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও বরগুনার বিখ্যাত খাবার - চুইয়া পিঠা, চ্যাবা পিঠা, মুইট্টা পিঠা, আল্লান, বিসকি, তালের মোরব্বা, শিরনি, নাড়িকেলের সুরুয়া, চালের রুটি, ইলিশ মাছ, মিষ্টি ইত্যাদি।
এ জেলার উল্লেখযোগ্য জলাশয়ের মধ্যে আছে: বিশখালী, বলেশ্বরী, বুড়ীশ্বর, আন্ধারমানিক ও গজালিয়া ইত্যাদি।
বরগুনা এর অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। প্রধান শস্য ধান, চিনাবাদাম, সরিষা, সূর্যমুখী ও বিভিন্ন ধরনের ডাল।
২০২২ সালের জনশুমারী ও গৃহগণনা প্রতিবেদন অনুযায়ী এ জেলার জনসংখ্যা প্রায় ১০,১০,৫৩০ জন এবং সাক্ষরতার হার ৮০.৪৯%। এ জেলার উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে:
আমতলি সরকারি কলেজ,
বরগুনা সরকারী কলেজ,
বরগুনা সরকারী মহিলা কলেজ,
বরগুনা জিলা স্কুল,
বরগুনা গার্লস হাই স্কুল,
ফুলঝুড়ি স্কুল এন্ড কলেজ,
গৌরিচন্না নবাব সলিমুল্লাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ইত্যাদি।
এ জেলার উল্লেখযোগ্য ও দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে:
বিবিচিনি শাহী মসজিদ (বেতাগী),
তালতলী বৌদ্ধ মন্দির;
বৌদ্ধ একাডেমি;
লালদিয়া সমুদ্রসৈকত;
সোনাকাটা সমুদ্র সৈকত;
সোনাকাটা ইকোপার্ক;
ফাতরার বন;
আমতলী হার্ড পয়েন্ট;
বাইনচটকির চর - হরিণের অভয়ারন্য;
সোনারচর;
হরিণ ঘাটার বনভূমি;
কাউনিয়ার খান বাড়ি;
দেবী কুলাম সিং এর মন্দির;
বিহঙ্গ দ্বীপ বা ধানসিড় চর;
শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত ইত্যাদি।
এ জেলার কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে:
শাহজাদা আবদুল মালেক খান (১৯২৫ - ১ এপ্রিল ২০০৭) - সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী;
অধ্যাপক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান - উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়;
মীর সাব্বির - অভিনেতা, পরিচালক ও উপস্থাপক;
অধ্যাপক সৈয়দ ফজলুল হক - বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ প্রমুখ।
এ জেলা থেকে বিভিন্নধরনের দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে কয়েকটি হলো: দৈনিক: দ্বীপাঞ্চল, সৈকত সংবাদ; পাক্ষিক: বরগুনা; সাপ্তাহিক: বরগুনা কণ্ঠ, বরগুনা বার্তা ইত্যাদি।