বান্দরবান জেলা | Bandarban District | iEducation
বান্দরবান বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগের একটি পার্বত্য জেলা। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সর্বশেষ নির্বাচনী এলাকা হলো বান্দরবান জেলা। এ জেলার ব্র্যান্ডিং স্লোগান হলো:
‘‘অপরুপা বান্দরবান’’
এ জেলা সম্পর্কে আরো বলা হয়: ‘‘বারো জাতির বাসস্থান, সম্প্রীতির বান্দরবান”
এ জেলার নামকরন সম্পর্কে যতদূর জানা যায় তা হলো: এলাকার বাসিন্দাদের প্রচলিত রূপকথায় আছে, এ এলাকায় একসময় অসংখ্য বানর বাস করত। আর এই বানরগুলো শহরের প্রবেশমুখে ছড়ার পাড়ে পাহাড়ে প্রতিনিয়ত লবণ খেতে আসত। এক সময় অনবরত বৃষ্টির কারণে ছড়ার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বানরের দল ছড়া পাড় হয়ে পাহাড়ে যেতে না পারায় একে অপরকে ধরে ধরে সারিবদ্ধভাবে ছড়া পাড় হয়। বানরের ছড়া পারাপারের এই দৃশ্য দেখতে পায় এই জনপদের মানুষ। এই সময় থেকে এই জায়গাটির পরিচিতি লাভ করে ম্যাঅকছি ছড়া নামে। অর্থাৎ মারমা ভাষায় ম্যাঅক অর্থ বানর আর ছি অর্থ বাঁধ। কালের প্রবাহে বাংলা ভাষাভাষির সাধারণ উচ্চারণে এই এলাকার নাম রুপ লাভ করে বান্দরবান হিসাবে। বর্তমানে সরকারি দলিল পত্রে বান্দরবান হিসাবে এই জেলার নাম স্থায়ী রুপ লাভ করেছে। তবে মারমা ভাষায় বান্দরবানের নাম রদ ক্যওচি ম্রো।
বান্দরবান জেলার মোট আয়তন ৪৪৭৯.০২ বর্গ কিলোমিটার এবং ঢাকা থেকে এ জেলার দূরত্ব প্রায় ৩৫৮ কিলোমিটার। এ জেলার পশ্চিমে কক্সবাজার জেলা ও চট্টগ্রাম জেলা, উত্তরে রাঙ্গামাটি জেলা, পূর্বে রাঙ্গামাটি জেলা ও মায়ানমারের চিন প্রদেশ এবং দক্ষিণে ও পশ্চিমে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশ অবস্থিত।
বান্দরবান জেলা গঠিত হয় ১০ অক্টোবর ১৯৮১ সালে এবং এ জেলা বাংলাদেশের সবচেয়ে কম জনবসতিপূর্ণ জেলা। এ জেলায় যেসকল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে তার মধ্যে আছে: মারমা, চাকমা, বম, মুরং, ত্রিপুরা, খ্যাং, খুমি, লুসাই প্রভৃতি।
বান্দরবান জেলা ৭টি উপজেলা, ৭টি থানা, ২টি পৌরসভা ও ৩০০ নং সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত। এ জেলার উপজেলাগুলো হলো:
আলীকদম, থানচি, নাইক্ষ্যংছড়ি, বান্দরবান সদর, রুমা, রোয়াংছড়ি এবং লামা উপজেলা।
এগেুলোর মধ্যে থানচি উপজেলা সর্ববৃহৎ (১০২০.৮২ বর্গ কিমি) এবং সবচেয়ে ছোট উপজেলা রোয়াংছড়ি (৪৪২.৮৯ বর্গ কিমি)।
এই জেলায় যেসকল নদী রয়েছে তার মধ্যে সাঙ্গু নদী অন্যতম যার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল, এটি বাংলাদেশের একমাত্র নদী যা দক্ষিণ থেকে উত্তরে প্রবাহিত হয়। এছাড়াও এ জেলায় মাতামুহুরী নদী, বাঁকখালী ইত্যাদি নদী রয়েছে।
২০২২ সালের জনশুমারী ও গৃহগণনা প্রতিবেদন অনুযায়ী এ জেলার জনসংখ্যা প্রায় ৪,৮১,১০৯ জন এবং শিক্ষার হার ৬৩.৬৪%। এ জেলার কিছু উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে:
বান্দরবান সরকারি কলেজ;
হাজী এম এ কালাম ডিগ্রি কলেজ;
বান্দরবান সরকারি মহিলা কলেজ;
লামা ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসা;
বান্দরবান টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ,
ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ,
বান্দরবান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ইত্যাদি।
এ জেলার কিছু উল্লেখযোগ্য ও দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে:
বগা লেক,
শুভ্র নীলা,
জীবন নগর পাহাড়,
পাতাং জারি জলপ্রপাত,
ফাইপি জলপ্রপাত,
মেঘলা;
প্রান্তিক লেক,
মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স,
শৈল প্রপাত,
নাফাখুম,
চিম্বুক পাহাড়,
নীলাচল,
নীলগিরি।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট ও জাদুঘর,
বাকলাই জলপ্রপাত,
রিজুক জলপ্রপাত,
চিংড়ি ঝিরি জলপ্রপাত,
জিংসিয়াম সাইতার জলপ্রপাত,
মারাইংতং পাহাড় (আলিকদম),
স্বর্ণমন্দির (বান্দরবান সদর),
বি এল আর আই (নাইক্ষ্যংছড়ি),
তাজিংডং,
অমিয়া খুম;
আন্ধার মানিক;
কেওক্রাডং (রুমা) ইত্যাদি।
এ জেলার কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন:
ইউ কে চিং - বীর বিক্রম খেতাব প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা;
জাফর ইকবাল - ফুটবলার প্রমুখ।
এ জেলা থেকে বিভিন্ন ধরনের দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হয় যার মধ্যে আছে: দৈনিক: নতুন বাংলাদেশ, সচিত্র; পাক্ষিক: সাংগু; মাসিক: বান্দরবান, নীলাচল, চিম্বুক ইত্যাদি।