ঝালকাঠি, পেয়ারা ও শীতলপাটি এর জন্য বেশি পরিচিত, বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চলে অবস্থিত বরিশাল বিভাগের একটি জেলা।
এ জেলার ব্র্যান্ডিং স্লোগান হলো: পেয়ারা আর শীতলপাটি, এই নিয়ে ঝালকাঠি।
ঝালকাঠি জেলার নামকরন সম্পর্কে যতদূর জানা যায় তা হলো:
প্রাচীনকালে কৈবর্ত সম্প্রদায় নামে জেলে সম্প্রদায়ের লোকেরাই প্রথম এ এলাকায় বসবাস শুরু করে। কৈবর্ত জেলেদের 'ঝালো' বলা হতো এবং তাদের পাড়াকে বলা হতো “ঝালোপাড়া। ঐতিহাসিকদের ধারণা এ 'ঝালোপাড়া' থেকেই 'ঝালকাঠি' নামের উৎপত্তি। কবি বিজয়গুপ্তের মনসামঙ্গল কাব্যেও জেলে সম্প্রদায়কে 'কালো' নামে যে ডাকা হত তার উল্লেখ আছে।
ঝালকাঠি জেলা | Jhalokathi District | iEducation
মুক্তিযুদ্ধের সময় ঝালকাঠি জেলা ৯ নম্বর সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। এ জেলার মোট আয়তন ৭০৬.৭৭ বর্গ কিমি এবং গুগল ম্যাপ অনুযায়ী ঢাকা থেকে এ জেলার দূরত্ব প্রায় ২০৩ কিলোমিটার। ঝালকাঠির উত্তর-পূর্বে বরিশাল জেলা, দক্ষিণে বরগুনা জেলা ও বিষখালী নদী, এবং পশ্চিমে লোহাগড়া ও পিরোজপুর জেলা অবস্থিত।
ঝালকাঠি জেলা ৪টি উপজেলা, ৪টি থানা, ২টি পৌরসভা ও ১২৫ ও ১২৬ মোট ২টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত। এ জেলার উপজেলাগুলো হলো:
কাঁঠালিয়া, রাজাপুর, ঝালকাঠি সদর ও নলছিটি উপজেলা।
ঝালকাঠির অন্যতম প্রধান এবং পুরোনো ঐতিহ্য শীতলপাটি। এটি বর্তমানে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যেরও অংশ। একটা সময় ছিল যখন গ্রামের বাড়িতে অতিথি এলে বসতে দেয়া হতো পাটিতে। গৃহকর্তার বসার জন্যও ছিল বিশেষ ধরনের পাটি।
ঝালকাঠি জেলা | Jhalokathi District | iEducation
শীতলপাটির পাশাপাশি ঝালকাঠিতে পেয়ারারও বিশেষ ঐতিহ্য রয়েছে। অফুরন্ত পেয়ারা জন্মে এখানে। ১৮৫০ একর জমি জুড়ে প্রতি বছর প্রায় ৬৫০০ টন পেয়ারা উৎপাদিত হয়। এ পেয়ারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করা হয়। ঝালকাঠির নবগ্রাম ও কীর্তিপাশা ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রামে পেয়ারার বাগান রয়েছে। এর সাথে যুক্ত আছে প্রায় ৫ হাজার কৃষক।
এ জেলাতে মাইট নামে একধরনের পাত্র পাওয়া যায়। এক সময়ের জমিদাররা তাদের চাল সংরক্ষণের জন্য এ মাইট ব্যবহার করত। এতে চাল রাখলে বহুদিন নষ্ট হত না।
ঝালকাঠি জেলা | Jhalokathi District | iEducation
এ জেলার অর্থনীতির প্রধান উৎস হলো কৃষি।
প্রধান শস্য: ধান।
প্রধান ফল: আম, কলা, জলপাই, কাঠাল, তাল, লিচু, নারিকেল, আমড়া, পেয়ারা, আমলকি, বিলেতি গাব, দেশি গাব, লকট, লটকন, জামরুল ইত্যাদি।
শিল্প-কারখানা: অপসোনিন ঔষধ কোম্পানি, বরফ কল, ময়দার কল, লবণ কারখানা, ধান কল, তেলের কল, ডক ইয়ার্ড ইত্যাদি।
ঝালকাঠি জেলা | Jhalokathi District | iEducation
ঝালকাঠিতে বিভিন্ন ধরনের পিঠা পাওয়া যায়। এ জেলার উল্লেখযোগ্য কিছু পিঠার মধ্যে আছে: ভাপা পিঠা, পুলি পিঠা, চিতই, পাক্কান, ঝিনুক
২০২২ সালের জনশুমারী ও গৃহগণনা প্রতিবেদন অনুযায়ী এ জেলার জনসংখ্যা হলো: ৬,৬১,১৬১ জন ও এ জেলার শিক্ষার হার ৮৩.০৮%. এ জেলার উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে:
শের-ই বাংলা ফজলুল হক ডিগ্রি কলেজ,
ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়,
ঝালকাঠি সরকারি হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়,
উদ্বোধন স্কুল,
ঝালকাঠি সরকারি কলেজ,
ঝালকাঠি সরকারি মহিলা কলেজ,
ঝালকাঠি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ,
নলছিটি মার্চেন্টস মাধ্যমিক বিদ্যালয়,
কাঁঠালিয়া পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ.
রাজাপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়,
ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদ্রাসা,
ঝালকাঠি জেলা | Jhalokathi District | iEducation
প্রধান নদী
কীর্তনখোলা নদী, গাবখান চ্যানেল, খায়রাবাদ নদী, সাঙ্গর নদী, কুমারখালী নদী, বিষখালী নদী, সুগন্ধা নদী, ধানসিঁড়ি নদী, জাংগালিয়া নদী, বাসন্ডা নদী ইত্যাদি।
কয়েকটি মাজারের মধ্যে আছে: আঞ্জির শাহ, দাউদ শাহ, কমরউদ্দিন পীর, পীর শাহাবুদ্দিন ইত্যাদি।
ঝালকাঠি জেলার ঐতিহ্য: শীতল পাটি শিল্প, তাঁত শিল্প, পান বরজ, গ্রাম বাংলার মৃৎ শিল্প ইত্যাদি।
ঝালকাঠি জেলা | Jhalokathi District | iEducation
এ জেলার উল্লেখযোগ্য কিছু মসজিদের মধ্যে আছে:
মাদাবর মসজিদ,
সুরিচোরা জামে মসজিদ,
ছুরিচোরা হাওলাদারবাড়ি মসজিদ;
গলুয়া মসজিদ;
খানবাড়ি মসজিদ;
জমাদ্দারবাড়ি মসজিদ;
শহীদীয়া মসজিদ;
ঝালকাঠি জেলা | Jhalokathi District | iEducation
এ জেলার কিছু চিত্তাকর্ষক, গুরুত্বপূর্ন ও দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে:
সুজাবাদ কেল্লা,
ঘোষাল রাজবাড়ী,
পুরাতন পৌরসভা ভবন,
ছৈলার চর;
বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর স্টেডিয়াম;
শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম;
নেছারাবাদ মাদ্রাসা,
শ্রীনাথ রাজার কাছারিবাড়ি;
মিরাবাড়ি;
গাবখান সেতু - দেশের দ্বিতীয় উচ্চতম সেতু;
তারা মন্দির;
তেওয়ারি জমিদার বাড়ি ও মন্দির;
পালবাড়ি মন্দির;
ঝালকাঠি জেলা | Jhalokathi District | iEducation
কাপুড়িয়াবাড়ি;
কীর্ত্তিপাশা জমিদার বাড়ি,
কীর্তিপাশা জমিদারবাড়ির পূজা মন্ডপ;
ঘোষাল রাজার বাড়ি;
কলবাড়ি;
জমাদ্দারবাড়ি;
গাজিবাড়ি;
বারচালা;
চায়না কবর;
শিববাড়ি;
বিনয়কাঠি
পৌর মিনি পার্ক;
ইকো পার্ক;
সিটি পার্ক;
শতবর্ষী বৃক্ষ ইত্যাদি।
ঝালকাঠি জেলা | Jhalokathi District | iEducation
এ জেলার কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন:
কামিনী রায় - লেখক;
শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক - যিনি বাংলার বাঘ হিসাবে পরিচিত, অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী এবং জন্মগ্রহণ করেন রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রাম;
মোহাম্মদ আযীযুর রহমান (কায়েদ সাহেব হুজুর) - প্রতিষ্ঠাতা নেছারাবাদ কামিল মাদ্রাসা;
আমির হোসেন আমু - সাবেক শিল্পমন্ত্রী;
এ জেলা থেকে যেসব পত্র-পত্রিকা প্রকাশিত হয় তার মধ্যে দৈনিক ঝালকাঠি বার্তা, ঝালকাঠি নিউজ অন্যতম।