যোগাযোগ করো, তোমার পাশে আমরা।
যোগাযোগ করো, তোমার পাশে আমরা।
সরাসরি কথা বলতে "কল করো" বাটনে প্রেস করো সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত।
কল করো

জয়পুরহাট জেলা | Joypurhat District

Created by I Education in ৬৪ জেলা 11 Mar 2025
Share

জয়পুরহাট জেলা | Joypurhat District | iEducation 

জয়পুরহাট, সোনালি মুরগি এবং লতিরাজের জন্য বিখ্যাত, বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগে অবস্থিত একটি জেলা। এ জেলার ব্র্যান্ডিং শ্লোগান হলো

সোনালি মুরগি-লতিরাজ 

জয়পুরহাটের গর্ব আজ

জয়পুরহাট জেলার নামকরণ সম্পর্কে যতদূর জানা যায় তা হলো:

১৬শ এবং ১৭শ শতাব্দী পর্যন্ত জয়পুরহাটের ইতিহাস সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া না গেলেও এই অঞ্চলটি পাল ও সেন রাজবংশের অধীনে ছিল বলে মনে করা হয়। প্রাচীন আমলে জয়পুরহাটের নাম ছিল বাঘাবাড়ীহাট এবং পরবর্তীতে এই জেলার নাম হয় গোপেন্দ্রগঞ্জহাট। অনেকে বলে থাকেন পাল সাম্রাজ্যর রাজা জয়পালের নামে এই জেলার নামকরন করা হয় জয়পুরহাট।


১৯৭১ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত এ জেলা বগুড়া জেলার একমাত্র মহকুমা ছিল এবং ১৯৮৪ সালে এটি জেলায় উন্নীত হয়। জয়পুরহাট জেলার মোট আয়তন প্রায় ৯৬৫.৪৪ বর্গকিমি এবং গুগল ম্যাপ অনুযায়ী ঢাকা থেকে এ জেলার দূরত্ব প্রায় ২৪৫ কিলোমিটার। এ জেলার উত্তরে গাইবান্ধা ও দিনাজপুর জেলা এবং ভারত,  দক্ষিণে বগুড়া ও নওগাঁ জেলা, পূর্বে বগুড়া ও গাইবান্ধা জেলা এবং পশ্চিমে নওগাঁ জেলা ও ভারত অবস্থিত।


এ জেলার মোট ০৫ টি উপজেলা, ৫টি  পৌরসভা এবং ৩৪ ও ৩৫ মোট ২টি  সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত। এ জেলার উপজেলাগুলো হলো:

জয়পুরহাট সদর, আক্কেলপুর, কালাই, ক্ষেতলাল এবং পাঁচবিবি উপজেলা। এদের মধ্যে পাঁচবিবি সর্ববৃহৎ এবং আক্কেলপুর সবচেয়ে ছোট উপজেলা


জয়পুরহাট জেলা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ন তথ্যের মধ্যে আছে:

এ জেলার প্রায় মাঝ দিয়ে চলে গেছে রেললাইন আর যার ফলে সৃষ্টি হয়েছে ৮টি রেলওয়ে স্টেশন। এদের মধ্যে জয়পুরহাট স্টেশন এ জেলার আইকন হয়ে উঠেছে। 

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জয়পুরহাট ৭ নং সেক্টরের অধীনে ছিল এবং ১৪ ডিসেম্বর এ জেলা শত্রুমুক্ত হয়।

এ জেলার প্রায় ১২০০ হেক্টর জমিতে লতিরাজ কচুর চাষাবাদ এবং প্রায় ৫০০০টি খামারে সোনালি জাতের মুরগি লালন-পালন করা হয় যা এ জেলার বেকারত্ব দুরীকরনে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা রাখছে আবার এ জেলার চাহিদা পুরণ করেও দেশের বিভিন্ন স্থানে তা  সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়াও এ জেলার লতিরাজ মানসম্পন্ন হওয়ায় তা প্রক্রিয়াজাত করে কুয়েত, মালেয়েশিয়া, সিংগাপুর, সৌদি আরবসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করে হয়। 



এ জেলার জামালগঞ্জ খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ এলাকা যেখানে চুনাপাথর এবং কয়লা পাওয়া যায়। ধারনা করা হচ্ছে চুনাপাথর খনিটিতে মোট ১২০০ মিলিয়ন টন চুনাপাথর মজুদ আছে এবং কয়লা খনিতে ১০৫৩.৯০ মিলিয়ন টন কয়লা মজুদ আছে। আর এ কারনেই জামালগঞ্জ কয়লা খনি দেশের বৃৃহত্তম কয়লা খনি। এছাড়াও বাংলাদেশের বৃহৎ চিনিকল হলো জয়পুরহাট চিনিকল। 


এ জেলায় প্রধান যেসকল ফসল উৎপাদিত হয় তার মধ্যে আছে: ধান, আলু, ইক্ষু, লতিরাজ, কলা, মাল্টা ইত্যাদি। 


এ জেলার নদীর মধ্যে অন্যতম হলো; ছোট যমুনা, তুলসী গঙ্গা, চিড়ি নদী, হারাবতি নদী ইত্যাদি


এ জেলায় যেসব  নৃ-তাত্ত্বি জনগোষ্ঠী বাস করে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো সাঁওতাল, ওরাঁও, মুন্ডা, মহালী, মোহান্ত, রবিদাস, রাজবংশী প্রভৃতি।


২০২২ সালের জনশুমারী ও গৃহগণনা প্রতিবেদন অনুযায়ী এ জেলার জনসংখ্যা প্রায় ৯,৫৬,৪৩০ জন এবং সাক্ষরতার হার ৭৩.৬৩ শতাংশ। এ জেলার উল্লেখযোগ্য কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে:

জয়পুরহাট গার্লস ক্যাডেট কলেজ;

জয়পুরহাট সরকারি কলেজ;

মহীপুর হাজী মহাসীন সরকারি কলেজ;

জয়পুরহাট সিদ্দিকীয়া কামিল মডেল মাদ্রাসা ইত্যাদি। 


এ জেলার ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থানের মধ্যে আছে

বেল আমলা বারশিবালয় (শিব মন্দির)যেটি এ জেলার জয়পুরহাট সদর উপজেলায় অবস্থিত।  ধারনা করা হয় রাজা বল্লাল সেন শিব উপাসনার জন্য এখানে এই মন্দিরগুলি নির্মাণ করেছিলেন ।

পাথরঘাটা (প্রত্নস্থল): বাংলাদেশের একটি প্রাচীন নগরী ও অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থল। তুলসীগঙ্গা নদীর উভয় তীরেই এই প্রাচীন নগরীর ধ্বংসাবশেষের চিহ্ন পাওয়া যায়।

লকমা জমিদার বাড়িঃ পাঁচবিবি উপজেলা, এ রাজবাড়িটি আনুমানিক প্রায় ১৫০০-১৬০০ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠা করেন জমিদার হাদী মামুন চৌধুরী। কথিত আছে এই জমিদার বাড়ির জমিদাররা ছিলেন খুবই অত্যাচারী ও নিষ্ঠুর। তাদেরকে গায়েবি মাধ্যমে এই বাড়ি ছেড়ে দিতে বলা হলে তারা তা ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। বর্তমানে অনেকেই এই বড়িটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে দেখতে আসেন। 

নিমাই পীরের মাজারঃ এ জেলার পাঁচবিবি উপজেলায় অবস্থিত। এলাকাবাসী এই মাজারকে পীর কেবলা নাসির উদ্দিনের মাজার ও হিন্দু সম্প্রদায় নিমাই পীরের দরগাঁ বলে দাবী করেন এবং তারা উভয়ই বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান এখানে করে থাকেন। 

গোপীনাথপুর মন্দিরঃ আক্কেলপুর উপজেলা অবস্থিত এ মন্দিরের ইতিহাস অনেক বড় হলেও এটুকু বলা যায় যে  প্রতিবছর  দোল পূর্ণিমাতে এখানে ১৩দিন ধরে এ মেলা চলে । এছাড়াও এটি পিকনিক স্পট হিসেবেও স্থানটি খ্যাতি লাভ করেছে।  

হিন্দা কসবা জামে মসজিদ: যেটি ক্ষেতলাল উপজেলায় অবস্থিত। শোনা যায়  হযরত আবদুল গফুর চিশতি ( রাঃ)এর নকশা এবং নির্মাণ কাজ করেন ।অপূর্ব নির্মাণশৈলীর জন্য এই মসজিদটি স্থানীয় এবং বাহির হতে আগত লোকজনের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় ।

নান্দাইল দীঘি: যেটি কালাই উপজেলায় অবস্থিত। ১ কিঃমিঃ দৈর্ঘের এই দিঘীটি রাজা নন্দলাল ১৬১০ সালে খনন করেন। স্থানীয় জনগণের মতে দিঘীটি এক রাতের  মধ্যে খনন করা হয়েছে । 

আছরাঙ্গা দীঘি: যেটি এ জেলার ক্ষেতলাল উপজেলায় অবস্থিত। শোনা যায় মৌন ভট্ট ৯ম শতকে এই দীঘিটি খনন করেন কৃষকদের পানির সমস্যা দুরিভূত করার জন্য। পরবর্তীতে কৃষকরা এ দীঘি থেকে পানি নিয়ে কৃষি কাজ করতো। পৌষের শুরুতে ধানের ক্ষেতগুলো পেকে লাল রঙ ধারন করত বলে এই উপজেলার নাম রাখা হয় ক্ষেতলাল। 

এছাড়াও আছে:

পাগলা দেওয়ান বদ্ধভূমি, দুয়ানী ঘাট, শিশু উদ্যান ও বাস্তবপুরী


জয়পুরহাট জেলার প্রখ্যাত ব্যক্তিবর্গের নামের তালিকা     

আতাউর রহমান - ভাষা সৈনিক ও কবি;

মোবারক আলী

শাহ নজরতল ইসলাম

মশিউর রহমান

কাজী রেজাউল করিম

খুরশীদ আলম - কন্ঠ শিল্পী;

খুরশীদ আলম - কন্ঠ শিল্পী

মনতাজুর রহমান আকবর - চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার;

ফাতেমা তুজ জোহরা - কন্ঠ শিল্পী;

শামসুদ্দিন হীরা - সংগীত সুরকার ও গীতিকার;

অধ্যাপক মজিবর রহমান দেবদাস - একুশে পদক জয়ী ২০১৫;

মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম - সাবেক বিজিবি মহাপরিচালক;

মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ - বর্তমান মহাপরিচালক, বিজিবি;

শরিফুল আনোয়ার - শিক্ষাবিদ;

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন - জাতীয় সংসদের হুইপ;

মীর শহীদ মণ্ডল - একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষা সৈনিক, কৃষক নেতা প্রমুখ।


এ জেলা থেকে যেসব পত্রিকা প্রকাশিত হয় তাদের মধ্যে অন্যতম হল সাপ্তাহিক চেতনা, মুক্তপাতা, জয়পুরহাট খবর, গ্রামীন আলো ইত্যাদি


Comments (0)

Share

Share this post with others