গাইবান্ধা জেলা | Gaibandha District | iEducation
গাইবান্ধা জেলা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগ এর একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এ জেলার ব্র্যান্ডিং স্লোগান হলো:
‘‘স্বাদে ভরা রসমঞ্জুরীর ঘ্রাণ
চরাঞ্চলের ভুট্টা-মরিচ গাইবান্ধার প্রাণ”
এ জেলার নামকরন সম্পর্কে যতদূর জানা যায় তা হলো:
কথিত আছে আজ থেকে প্রায় ৫২০০ বছর আগে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ এলাকায় বিরাট রাজার রাজধানী ছিল। বিরাট রাজার প্রায় ৬০ (ষাট) হাজার গাভী ছিল। সেই গাভী বাধার স্থান হিসাবে গাইবান্ধা নামটি এসেছে।
গাইবান্ধা জেলা ১৮৫৮ সালের ২৭ আগস্ট বৃহত্তর রংপুর জেলার অধীনে ভবানীগঞ্জ নামে মহকুমা হিসাবে গঠিত হয়। ১৮৭৫ সালে ভবানীগঞ্জ নদীগর্ভে বিলীন হলে মহকুমা সদর দপ্তর গাইবান্ধায় স্থানান্তরিত হয়। এ এলাকা এক সময় বাহরবন্দ পরগনার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯২৩ সালে গাইবান্ধা শহরটি মিউনিসিপ্যালিটিতে রূপান্তর হয়। ১৯৬০ সালে মিউনিসিপ্যালিটি বিলুপ্ত হয়ে গাইবান্ধা টাউন কমিটি গঠিত হয়। ১৯৭৩ সালে শহর এলাকা গাইবান্ধা পৌরসভায় রূপান্তরিত হয়। গাইবান্ধা জেলা গঠিত হয় ১৯৮৪ সালে।
গাইবান্ধা জেলার মোট আয়তন ২১৭৯.২৭ বর্গ কিমি এবং ঢাকা থেকে এ জেলার দূরত্ব প্রায় ২৫৮ কিলোমিটার। গাইবান্ধা জেলার উত্তরে কুড়িগ্রাম ও রংপুর জেলা, দক্ষিণে বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলা, পূর্বে জামালপুর জেলা, তিস্তা ও যমুনা নদী এবং পশ্চিমে রংপুর, দিনাজপুর ও জয়পুরহাট জেলা অবস্থিত।
গাইবান্ধা জেলা ৭ টি উপজেলা, ২টি পৌরসভা ও ২৯-৩৩ পর্যন্ত মোট ৫টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত। এগুলো হচ্ছে -
গাইবান্ধা সদর উপজেলা
সাদুল্লাপুর উপজেলা
ফুলছড়ি উপজেলা
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা
পলাশবাড়ী উপজেলা
সাঘাটা উপজেলা এবং
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা
জেলার সাতটি উপজেলার মধ্যে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সর্ববৃহৎ (৪৮১.৬৬ বর্গ কিমি) এবং জেলার সবচেয়ে ছোট উপজেলা পলাশবাড়ী (১৯০.৬৭ বর্গ কিমি)।
মুক্তিযুদ্ধের সময় গাইবান্ধা ১১ নম্বর সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত ছিলো এবং এ জেলা ৭ই ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয়।
এ জেলায় সাঁওতাল, ওরাও প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। এছাড়াও এ জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কোচাশহর ইউনিয়ন কুটির শিল্পে খুবই উন্নত। এখানে ১৯৬০-এর দশক থেকে সুয়েটার, মুজা, f ইত্যাদি তৈরী করা হয়।
নদীমাতৃক গাইবান্ধা জেলায় যেসকল নদ-নদী রয়েছে তার মধ্যে আছে: ব্রহ্মপুত্র নদ, তিস্তা নদী, যমুনা, ঘাঘট, বাঙালি নদী ইত্যাদি।
২০২২ সালের জনশুমারী ও গৃহগণনা প্রতিবেদন অনুযায়ী এ জেলার জনসংখ্যা প্রায় ২৫,৬২,২৩২ জন এবং শিক্ষার হার ৬৬.৮৭%. এ জেলার কিছু উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে:
গাইবান্ধা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৫),
গাইবান্ধা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৬),
পলাশবাড়ি আদর্শ ডিগ্রি কলেজ;
মহিমাগঞ্জ আলিয়া কামিল মাদ্রাসা;
সুন্দরগঞ্জ ডি ডাব্লিউ সরকারি কলেজ ইত্যাদি।
এ জেলার উল্লেখযোগ্য, দর্শনীয় ও চিত্তাকর্ষক স্থানের মধ্যে রয়েছে:
বালাসী ঘাট, (ফুলছড়ি)
পেরিমাধব জমিদার বাড়ি, (সাদুল্লাপুর)
প্রাচীন মাস্তা মসজিদ, (গোবিন্দগঞ্জ)
ফুলপুকুরিয়া পার্ক ( গোবিন্দগঞ্জ)
নলডাঙ্গার জমিদার বাড়ি, (সাদুল্লাপুর)
ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার, (ফুলছড়ি)
রংপুর সুগার মিলস্ লিমিটেড, (মহিমাগঞ্জ, গোবিন্দগঞ্জ)
ঘেগার বাজার মাজার, (সাদুল্লাপুর)
ড্রীম সিটি পার্ক,(সাঘাটা)
গাইবান্ধা পৌর পার্ক,(গাইবান্ধা সদর)
ড্রীমল্যান্ড, (পলাশবাড়ী সদর)
হযরত শাহ জামাল মাজার শরীফ, (সাদুল্লাপুর)
জামালপুর শাহী মসজিদ, (সাদুল্লাপুর)
এসকেএস ইন, (গাইবান্ধা সদর)
রাজাবিরাট প্রসাদ, (গোবিন্দগঞ্জ)
পাকড়িয়া বিল, (সাদুল্লাপুর)
বামনডাঙ্গা জমিদার বাড়ি ,(সুন্দরগঞ্জ)
শিবরাম আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়;
বর্ধনকুঠি;
মীরের বাগানের ঐতিহাসিক শাহসুলতান গাজীর মসজিদ;
প্রাচীন মাস্তা মসজিদ ইত্যাদি।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন:
আবু হোসেন সরকার - পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশীক সরকারের মুখ্যমন্ত্রী;
শাহ্ আব্দুল হামিদ - গণপরিষদের প্রথম স্পীকার;
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস - সাহিত্যিক;
প্রফেসর ড. এম.আর সরকার - রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য;
মাহাবুব এলাহী রন্জু - মুক্তিযুদ্ধে গাইবান্ধা এলাকার গৌরব রন্জু কম্পানীর কমান্ডার;
ফজলে রাব্বী মিয়া - সাবেক ডেপুটি স্পিকার;
আহমেদ হোসেইন - অবিভক্ত বাংলার কৃষিমন্ত্রী;
খাঁন বাহাদুর আব্দুল মজিদ - ইংরেজ আমলে সমগ্র পূর্ব বাংলায় যে কয়জন ‘খাঁন বাহাদুর’ উপাধিতে ভূষিত হন তাঁদের মধ্যে অন্যতম;
টিআইএম নুরুন্নবী চৌধুরী - স্বনির্ভর আন্দোলনের প্রবক্তা;
আবু হোসেন সরকার - পাকিস্তান আমলের মুখ্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী;
সিরাজউদ্দিন আহম্মেদ - সাবেক পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের ডেপুটি স্পিকার প্রমুখ
এ জেলা থেকে বিভিন্নধরনের দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হয় যার মধ্যে আছে: দৈনিক ঘাঘট, দৈনিক আজকের জনগন, দৈনিক মাধুকর, দৈনিক জনসংকেত, সাপ্তাহিক অবিরাম ইত্যাদি।