খাগড়াছড়ি জেলা | Khagrachari District | iEducation
খাগড়াছড়ি, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগের একটি পার্বত্য জেলা। উপজেলার সংখ্যানুসারে খাগড়াছড়ি বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা।
এ জেলার ব্র্যান্ডিং স্লোগান হলো:
‘‘আলুটিলা - রিছাং - গিরি
বৈচিত্র্যময় খাগড়াছড়ি”
এ জেলার নামকরণ সম্পর্কে যতদূর জানা যায় তা হলো:
খাগড়াছড়ি একটি নদীর নাম। নদীর পাড়ে খাগড়া বন থাকায় পরবর্তী কালে তা পরিষ্কার করে জনবসতি গড়ে উঠে, ফলে তখন থেকেই এটি খাগড়াছড়ি নামে পরিচিতি লাভ করে। জেলা সৃষ্টির পূর্বে এর নাম ছিল কার্পাস মহল।
খাগড়াছড়ি জেলার মোট আয়তন ২৬৯৯.৫৬ বর্গ কিলোমিটার। রাজধানী ঢাকা থেকে এ জেলার দূরত্ব প্রায় ২৭০ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদর থেকে প্রায় ১১১ কিলোমিটার। এ জেলার পূর্বে রাঙ্গামাটি জেলা, দক্ষিণে রাঙ্গামাটি জেলা ও চট্টগ্রাম জেলা, পশ্চিমে চট্টগ্রাম জেলা ও ভারতের ত্রিপুরা প্রদেশ এবং উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা প্রদেশ অবস্থিত।
‘রেইড অফ ফ্রন্টিয়ার ট্রাইবস অ্যাক্ট ২২, ১৮৬০ মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা গঠিত হয় ১৮৬০ সালে। ১৯০০ সালে চিটাগাং হিলট্রাক্টস্ রেগুলেশন আইন মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলাকে তিনটি মহকুমায় বিভক্ত করা হয়। খাগড়াছড়ি তার মধ্যে একটি। ১৯৮৩ সালে খাগড়াছড়ি মহাকুমাকে জেলায় উন্নীত করা হয়। ১৯৮৯ সালে সরকার খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন (ধারা ২০) মোতাবেক খাগড়াছড়ি স্থানীয় সরকার পরিষদ গঠন করেন যা ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মাধ্যমে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদে রূপান্তরিত হয়।
খাগড়াছড়ি জেলা ৯টি উপজেলা, ৯টি থানা, ৩টি পৌরসভা ও ২৯৮ নং সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত। এ জেলার উপজলাগুলো হলো:
খাগড়াছড়ি সদর, গুইমারা, দীঘিনালা, পানছড়ি, মহালছড়ি, মাটিরাঙ্গা, মানিকছড়ি, রামগড় ও লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা।
খাগড়াছড়ি জেলার প্রধান ৩টি নদী হলো: মাইনী নদী, চেঙ্গি নদী এবং ফেনী নদী।
এ জেলায় বাঙালী জনসাধারণের পাশাপাশি চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা প্রভৃতি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভাষা হিসেবে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা ইত্যাদি প্রচলিত। চাকমাদের বিঝু উৎসব, মারমাদের সাংগ্রাই উৎসব এবং ত্রিপুরাদের বৈসাবী উৎসব এ জেলায় অনেক বেশি পরিচিত।
২০২২ সালের জনশুমারী ও গৃহগণনা প্রতিবেদন অনুযায়ী এ জেলার জনসংখ্যা প্রায় ৭,১৪,১১৯ জন এবং শিক্ষার হার ৭১.৭৩%। এ জেলার কিছু উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে:
খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ;
খাগড়াছড়ি আইন কলেজ;
খাগড়াছড়ি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ;
খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ইত্যাদি।
খাগড়াছড়ি জেলার উল্লেখযোগ্য ও দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে:
আলুটিলা গুহা ও ঝর্ণা,
রিছাং ঝর্না,
মহালছড়ি হ্রদ,
পানছড়ি/শান্তিপুর অরণ্য কুটির,
মানিকছড়ি মং রাজবাড়ি,
বিডিআর স্মৃতিসৌধ,
রামগড় লেক ও চা বাগান
নিউজিল্যান্ড পাড়া
তৈদুছড়া (ঝর্ণা)
মায়াবিনী লেক
হাতিমাথা পাহাড়
রামু বৌদ্ধ বিহার;
দেবতার পুকুর;
মাতাই পুখিরি;
হর্টিকালচার পার্ক;
তকবাক হাকর (গুহা)
তৈদুছড়া ঝর্ণা
দীঘিনালা সেনানিবাস
খাগড়াছড়ি সেনানিবাস
খাগড়াছড়ি স্টেডিয়াম
কমলক ঝর্ণা ইত্যাদি।
এ জেলার উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন:
যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা –– সাবেক সংসদ সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি জটিলতা নিরসন সম্পর্কিত টাস্ক ফোর্স চেয়ারম্যান।
সমীরণ দেওয়ান –– সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান
শরদেন্দু শেখর চাকমা –– গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক রাষ্ট্রদূত (ভূটান)।
নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা –– চেয়ারম্যান পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড
সাচিংপ্রু চৌধুরী –– মং রাজা, খাগড়াছড়ি
প্রভাংশু ত্রিপুরা –– লেখক ও গবেষক।
নির্মলেন্দু চৌধুরী –– খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র।
শেফালিকা ত্রিপুরা–– বিশিষ্ট সমাজসেবী ও নারী উন্নয়ন কর্মী।
আনাই মগিনি –– জাতীয় পর্যায়ে নারী ফুটবলার।
আনুচিং মগিনি –– জাতীয় পর্যায়ে নারী ফুটবলার প্রভৃতি।
খাগড়াছড়ি জেলা থেকে যেসকল পত্র-পত্রিকা প্রকাশিত হয় তার মধ্যে আছে: দৈনিক: অরণ্য বার্তা; সাপ্তাহিক: পার্বতী, চাবুক, পার্বত্য বাণী, বিন্যাস ইত্যাদি।